তুরস্ক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে গ্রিসে যাওয়ার সময় নিখোঁজ বাংলাদেশি যুবক আমিন উল্লাহ সুমন (২৬) মারা গেছেন। তীব্র ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। সে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের চরশাহাভিকারী গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে সুমন ছিল সবার ছোট।

সোমবার রাতে পারিবারিক সুত্রে সুমনের মৃত্যুর বিষয়টি জানা গেছে। এর আগে গত মাসের ৩১ জানুয়ারি তিনি গ্রিস যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
চরচান্দিয়া ইউনিয়নের পূর্ববড়ধলী গ্রামের আব্দুর রহমান ইস্তাম্বুলের হাসপাতালে সুমনের মরদেহ শনাক্ত করে তার ভাই সাইফুল ইসলামকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সুমনের ভাই সাইফুল ইসলাম গ্রিসে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি সুমন অন্য ২০ জনের সঙ্গে গ্রিসে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। গ্রিসের পুলিশ তাদের দুইদিন আটক রেখে পুনরায় তুরস্কে পাঠায়। তুরস্কে ফেরার সময় প্রচণ্ড শীতে সুমনসহ আরও কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ইস্তাম্বুলের হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরমধ্যে সোমবার জানতে পারি সেখানে সুমনের মৃত্যু হয়েছে।

সুমনের বড় বোন নাসিমা আক্তার বলেন, সোনাগাজীর চরশাহাভিকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করে সুমন। ২০২১সালে জীবিকার তাগিদে সে দেশ ছেড়ে ওমান চলে যায়। ৬ মাস ওমানের থাকার পর সেখান থেকে এক দালালের মাধ্যমে ইরাক চলে যান। ইরাক থেকে আরেক দালালের মাধ্যমে কতুরস্ক চলে যান। পরবর্তীতে সিলেটের হবিগঞ্জের এক দালালের সঙ্গে ৩ লাখ চল্লিশ হাজার টাকা চুক্তি করে তুরস্ক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করে একাধিকবার ব্যর্থ হয়।

গত ৩১ জানুয়ারি সে আমাদের জানিয়ে চতুর্থবারের মতো গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরপর থেকে আমরা তার আর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। এরমধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যুর খবর জানতে পারি। সুমনের মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর তার পরিবারে শোকের মাতম চলছে। সুমনের এক স্ত্রী ও ৫ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। স্বামীকে হারিয়ে তার স্ত্রী ও কন্যা সন্তান বার বার মূর্চা যাচ্ছেন। প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দিয়েও কান্না থামাতে পারছে না। সুমনের মরদেহ দেশে ফেরৎ আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন সুমনের পরিবারের সদস্যরা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জীবন জীবীকা তথা দেশের অর্থনীতিতে অবদানের জন্য সুমন উন্নত দেশে যেতে চেয়েছেন। তার মৃত্যুতে এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।